Saturday, May 25, 2019

রাত বাগিচায় ভোর


          কাজল মাখা চোখের পাতার মিটিক-মিটিক করার আড়ালে,যেমন কোনো সুন্দর ইশারা আঁকা হয়ে যায় অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির স্পন্দনের ক্যানভাসে;সেরকমই মেঘের ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে,তার রুপালি আঁচলার বিন্যাসে মেলে ধরা স্রোতের ধারা দেখে,আমিও মুগ্ধ ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ|দূরের সীমানা ঘেঁষে সারি-সারি সবুজের পাঁচিলগুলো যেন আলোর চিরুনিতে,মাথার চুল মেলাচ্ছে,নামতে থাকা কালো রঙের ঘোমটা মাথায় দেওয়ার আগে|
 
   
অপূর্বযেন এক অজানা সময়ে পা রেখে,আমি ঘাসের মাথায় নিজের পায়ের ক্ষমতা মাপার মধ্যেই,শিশিরের পা ধুইয়ে দেওয়ার ভেজা ভেজা অনুভূতি নিজের স্নায়ুতে মেশানোর আনন্দে এগিয়ে চলেছিকিছু কিছু মুহূর্ত ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করার মতো সময়ও নষ্ট করার মত ইচ্ছেও ছিল না বিশেষ;চোখের আরাম উপভোগ করার আনন্দেই শুধু পথ চলা ছিল রাতের কোনো নিশাচরের মতো| একলা হাঁটার মধ্যে কোথাও যেন চিন্তা মুক্ত বাতাসের শ্বাস নেওয়ার একটা স্বাদ বার বার পাচ্ছিলাম আমার নাকের আগায়|আমি তখনও জানতাম না যে শহরের বাতাসের-পরের বাতাসে এতকিছু লুকিয়ে থাকে;সেখানে যেমন নিজেকে নতুন করে অনুভব করার আনন্দ লুকিয়ে থাকে তেমনি পাওয়া যায় প্রকৃতির হাতের সৃষ্টি করা চারপায়া,শুধু নিজেকে শায়িত করে দিতে হয় ওই চারপায়াতে|

   
আমি এরকমই চেয়েছিলাম কোনো একটা দিনের শেষে রাতের আগমন,যেখানে শুধু থাকবো আমি,আমার ব্যাগ,পায়ের নিচের জুতো তার সাথে একটা ছোট ডায়েরি যেটাতে আমি লিপিবদ্ধ করবো আমার স্বাধীনতাকে|

  
কিছু কিছু জিনিস যেমন লেখকের লেখনীতেও কম থেকে যায়,সেরকমই হয়তো আমার একটা রাতের প্রকৃতিকে দেখার আনন্দটাও কোনো অক্ষরের পাঁচিলে সাজিয়ে তুলে ধরলেও, হয়তো অনেকের কাছেই, আমার একটা রাতের প্রকৃতির কোলে তারাগোনার সাথে সাথে , কালো সাদা মেঘের হাত ধরার চেষ্টার এই এক্সপেরিয়েন্স মনে হবে ঝিনুকের মধ্যে মুক্ত খুঁজে পাওয়ার মতোই কঠিন|

  
প্রতিটা মুহূর্তকে যেন মনে হচ্ছে আমার পিঠের ব্যাগের সাথে বেঁধে নিয়ে পাড়ি দিই  পরের দিনের সৈকতে|জানি সম্ভব নয় সেটা,তাই ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে আমি আরও একবার পেছনে ফিরে তাকালাম অতিক্রান্ত পথের ধুলোতে আমার মিশে যাওয়া পায়ের ছাপগুলোকে খুঁজে পাবার আশায়|সময় পার হয়ে যাওয়ার মতোই সেগুলো মিশে গেছে হয়তো শিশিরের চাদরে|

 
কোনো কিছু ব্যক্ত করার আগেই শেষ বারের মতো রাতকে নিজের মতো করে দেখে লেখার ব্যস্ততার ফাঁকেই দেখি দূরের দিগন্তে সূর্য হাজির একটা গোল থালাতে প্রদীপের শিখার ন্যায় ঊষার কিরণ নিয়ে|স্বাগত জানাচ্ছে আমাকে গাছের পাতাদের হাতের আঙুলের মাঝে মাঝে আলো পাঠিয়ে|আহ্বান জানাচ্ছে কোনো নতুন দিনের শুরু করার জন্য |

   
      আমিও সেই দিশাই পা-বাড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম আরেকটা দিনের সাথে |

No comments:

Post a Comment