Tuesday, March 5, 2019

দোয়াতে-ISHQ

পাঁচ বছর ছিল বয়স যখন আমার ঠাকুর মশাইয়ের হাত ধরে হাতেখড়ি হয়েছিল|এখনো স্পষ্ট মনে আছে ভাঙা ভাঙা হাতে সাদা খড়ি লেগে থাকা আঙুলের জোরে আমি প্রথম লিখেছিলাম , , , , , , |পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মা তখন খুশির হাসি ওড়াচ্ছিলো ঠাকুর ঘরের বাইরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে এবং তার সাথে আমাকে উৎসাহ দিচ্ছিলো নিজের মতো কিছু শব্দকে লিখে পুরোহিতকে দেখাতে|ওই টুকু বয়সে মাথায় কিছুই আসেনি আমার, শুধু ভ্যাল-ভ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম ঠাকুর ঘরে বসে থাকা বাকি দাদা দিদিদের মুখের দিকে|যেন কিছু  উত্তর চাইছিলাম সবার থেকে,জীবনের প্রথম শব্দ আবিষ্কারের তাড়ায় |প্রথম যেদিন নিজের মতো কিছু লিখতে পারলাম সেদিন ছিল ইস্কুলের ক্লাস ওয়ানের ছাত্র রূপে,শেষের দিকে বসে শ্লেট পেন্সিল হাতে|মাস্টারমশাই পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলো সেদিন নিজের মতো কিছু লিখে দেখানোর জন্য, শুধু বাধা বলতে ছিল হাতে গোনা পনেরোটা মিনিট,যা হোক করে লিখেছিলাম,স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ঘুগনীর দোকানির দিকে তাকিয়ে,তার ঘুগনীর বাটিতে কি কি পেতাম সেগুলো নিয়েই|সত্যি বলতে সেদিন মাস্টারমশাই খুব হেসেছিলেন আমার লেখার বিষয়বস্তু দেখে কিন্তু পারিপার্শিক ঘটনাকে লেখার বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থাপনা দেখে তিনি পিঠ চাপড়ে বাহবাও দিয়েছিলেন|

সেদিন ওই একটা ছোট্ট একপাতার লেখার মধ্যে দিয়ে অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছিলাম, বাড়ি ফিরে এসেই মা-কে প্রশ্ন করেছিলাম,"" মা লেখার জন্য ভালো ভালো বিষয় কিভাবে আমি চিনতে পারবো ?মা শুধু একটা কথায় বলেছিলো,"" লেখাটা শুধু তোমার, তোমার নিজের, তোমার ইচ্ছে প্রকাশের আরেকটা রূপ, তুমি তোমার লেখাতে স্বাধীন|"" কথাগুলো বুঝতে একটু দেরি হয়েছিল আমার |


প্রতিদিন খেলার শেষে এসে সন্ধ্যে বেলায় দুধ মুড়ির সাথে সাথে কত গল্পই না হতো দাদা দিদিদের সাথে | আমি শুধু গল্পের কথার শেষে একটা করে প্রশ্ন নিয়ে পড়তে বসতাম | যার উত্তর গুলো নিজের মতো মনে রেখে যা পারতাম লিখে যেতাম | প্রথম যখন আমার সাথে কালী পেনের দেখা হয়, সেদিন ছিল আমার ক্লাস টু-এর ফাইন্যাল পরীক্ষার শেষ দিন|বাড়ি এসে দেখি আমার বই ,খাতার মাঝে একটা দোয়াত সাথে একটা স্বার্ণালী টুপির কালী পেন|ওটাই ছিল আমার  প্রথম কোনো ভালো লাগার জিনিস যেটা না চাইতেই পেয়েছিলাম|সেদিনের লেখাটাও ছিল অবশ্য আমার ওই সুন্দর পেনটাকে নিয়ে|প্রতিদিন লেখার সাথে সাথে কখন যে নিজের মধ্যে একটা নতুন নতুন জিনিস কে নিয়ে লেখার তাগিদ বাড়িয়ে ফেলেছিলাম, সেটা নিজের অন্তরালে নিজেই টের পাইনি|ক্লাস ফাইভ হবে তখন যখন ইস্কুলের ম্যাগাজিন এর জন্য আমি আমার একটা প্রবন্ধকে জমা করেছিলাম, লেখাটা হয়তো ওতো বড়ো মাপের ছিল না , কিন্তু ওটাই ছিল আমার  প্রথম কোনো ভাবনা যা কিনা মুখ দেখেছিলো বাইরের পাঠকদের|


একটা আনন্দ,একটা নতুন কিছু ভাবনাকে প্রকাশ করার যে খিদে আমার মধ্যে দানা বেঁধেছিলো তার নেপথ্যে ছিল মায়ের বলা সেদিনের কথা গুলো|যেগুলোর আক্ষরিক অর্থ আমায় আস্তে আস্তে সময় সময়ের সাথে সাথে বয়ে যাওয়া সমস্ত শব্দরা শেখাতে শুরু করেছিল|তখন মনে হতো,আমি হলাম একজন কারিগর যে তার কুঠিতে বসে কিছু শব্দদের সাজায় ,তাদের উড়তে শেখায়, আবার কখনো কখনো উচ্চ-বাচ্চ করলে তাদের টুটি টিপে মেরেও ফেলে|একটু যখন পরিণত হলাম আমার লেখার প্রতি প্রেম যেমন বাড়লো, তেমনি বাড়লো কিছু রাগের আত্মপ্রকাশ,যেগুলো আমাকে অনেক সময় আমার মুখে কাদার  স্বাদও  দিয়েছিলো |


শুধু একটা কথা, এখনো আমাকে লেখায়, একটা কথায়  আমাকে ভাবতে বাধ্য করে,-----

---""
লেখাটা শুধু তোমার, তোমার নিজের, তোমার ইচ্ছে প্রকাশের আরেকটা রূপ, তুমি তোমার লেখাতে স্বাধীন |""

3 comments:

  1. অসাধারণ হয়েছে । লেখকের চিন্তার সাথে নিজের ছোটবেলার কিছু মুহুর্তের দেখা পেলাম ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks... please share it with your friends and family...

      Delete