Friday, March 22, 2019

প্রেমিক

গল্প বলার জন্য যেমন একজন বক্তার দরকার ছিল আমার,সেরকমই গল্পের মধ্যে ছোট ছোট ইমোশনগুলোতে জল এনে দেওয়ার জন্য দরকার ছিল তার উপস্থিতির|সত্যি বলতে কোনো কিছু না ভেবেই আলাপ হয়েছিল আমাদের|আমি কখনোই ভাবতে পারিনি কোনো দিন ওই বাঁধা চুলের, ফর্সা, রোগা মেয়েটার হাসি আমাকে এভাবে নাড়িয়ে দেবে!একসাথে কলেজের শেষে বসে থাকার অভিনয়ে লুকিয়ে থাকবে তাকে না পাওয়ার আর্তনাদ,যেগুলো হয়তো এখনো পাঁচিলের ধারের টগর গাছটা তার পাতা গুলোতে নাড়ানোর মাঝে মাঝে, মাটিতে একটা একটা করে ছুড়ে ফেলে আমাদের নাম দিয়ে|গাছটা হয়তো এখনো বাঁধানো  আছে কলেজের অন্য কোনো প্রেমের জন্য|তার সালোকসংশ্লেষ চলার মতোই, অবিরত প্রেমের উত্থান হয় দিনের পর দিন,শুধু পাল্টে গেছে বক্তা এবং তার গল্পের চরিত্রের মুখ |

মেয়েটার নাম আজ প্রায় ভুলতে বসেছি বললেই চলে,শুধু মনে থেকে গেছে তার ফ্ল্যাটের ফ্লোর নম্বরটা|মনে লেগে আছে তার মুখ ফিরিয়ে না বলার ভঙ্গিমাটা|মাঝে মাঝে সেই একই পথে হাঁটার ফাঁকে ফাঁকে জিরিয়ে নেওয়ার ব্যস্ততায়, কিছু প্রশ্ন করে আসি সিমেন্ট বাঁধানো গাছের নিচে বসে;আচ্ছা সত্যি কি ভুল ছিল আমার?নাকি একটু বেশি চাওয়ার আকাঙ্খায় আমি তাকে হারিয়েছিলাম তোমার ঝরে যাওয়া পাতাদের মতো?কখনো কখনো এটাও মনে প্রশ্ন আসে,আমার হারানোর থেকেও কি বেশি কষ্ট হয় তোমার,যখন তুমি হারাও তোমার সবুজ পাতাদের?যারা অনেকটা সময় ধরে তোমার সাথে সময় কাটিয়ে ছিল? যারা বয়ে আনতো বসন্ত?যারা শীত ঢাকতো তোমার দেহে নিজেদের ত্যাগ করে ?

উত্তর পেতাম, হ্যাঁ, আমাকে সে উত্তর দিতো, শুধু ভাষা গুলো ছিল মূকাভিনয়ে|কখনো সে নিজের ছাল ছাড়িয়ে বুঝিয়েছে,যে কিছু জিনিস নিজের হলেও,নিজের মনে করে বেঁচে থাকলেও,তাদের বাঁধন কেবল মাত্র একটা সময় পর্যন্তই থাকে|সময় শুধু বাস্তবের প্রেক্ষাপটের ওপর দাঁড়িয়ে,সেখানে তোমার আমার কিংবা ওই মেয়েটার দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে কোনো ফারাক নেই|ফারাক সৃষ্টি করে ঢলে যাওয়া সূর্যের,বয়ে যাওয়া কিরণের নাম করে একের পর এক অতিক্রম করে যাওয়া গোধূলির ঢেউ ভেঙে যাওয়ার অবকাশে|

আমি এই উত্তরের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে দেখি আমার ভেঙে যাওয়া প্রেমের মুখোমুখি আমি নিজেই|নিজের মুখের আদলে নিজেকেই ঢাকছি, কিছু লজ্জা, কিছু রাগ|কিছু ফেলে আসার অভিনয়ে  বিসর্জন দেওয়া শরীরের হাড়ের ক্ষত চিহ্নের পেছনে লুকিয়ে রাখা সব বাস্তবের উত্থান হয়েছে আজ|যারা বার বার আমাকে মনে করিয়ে দেয় গাছের স্বরূপ  নিজের শরিরের কথা,যেখানে  শুধু অনীহা, না পাওয়ার ক্ষোভ, কিন্তু সত্যি বলতে সেগুলো সবই ছিল আমার নিজের তৈরী করা কিছু মিথ্যে বাহানা,কোনো কিছুই ছিল না আত্মত্যাগ যেটা আমাকে শিখিয়েছে ছোট্ট ওই একখানা টগর|

আজ যখন আমি বুঝতে পারলাম, নিজের গালে শুধু হাসি আঁকার মধ্যে দিয়ে স্বীকার করলাম বাস্তবের নীল আকাশ|আমি মুক্ত,আমি জীবিত,প্রেম এলে প্রেম আসে,কিন্তু আলোড়নটা একেবারেই অন্য, যেন এক অন্যরকমের আনন্দ; নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ,যেটা প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম গত চার বছরে|

সব হেরে,কিছু নতুন শেখার ব্যাস্ততাতেই নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার নামই হয়তো বাস্তব|

     

         

        

2 comments: