Tuesday, April 14, 2020

In Lamho Ke Daaman Mein

আজকের বর্ষবরণের দিনে, যখন আমরা সবাই বাড়িতেই বসে বসে কাটাচ্ছি, তাই এই দিনে আরও ভালোভাবে নতুন কিছু শুনে না হয় আর একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি।
 In Lamho Ke Daaman Mein Originally composed by none other than A R Rahaman. 

কিন্তু সাগ্নিক ও সুমিতের অসাধারণ এই এক্সপেরিমেন্টাল কভারটা  বিশ্বাস করো আলাদাই একটা মাধুর্য্য এনেছে গানটার মধ্যে । তাই বর্ষবরনে এই কভারটা আরেকবার না শুনে থাকতে পারলাম না। 

ফাঁকা সময়, youtube তো অনলাইন, না দেখে থাকলে দেখে নিন নতুন করে,চ্যানেলটাকে সাপোর্ট করুন, যাতে আগামী দিনে আরও ভালো কাজ আন্তে পারে, না হলে কি বলুন তো রতন কাহার দিনে দিনে বাড়তে থাকবে, যতদিন না অন্য কেও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে যে আসল রতন কে।

।। শুভ নববর্ষ ।।

Please do Like || Share || Comments || as much as you can.


Saturday, May 25, 2019

রাত বাগিচায় ভোর


          কাজল মাখা চোখের পাতার মিটিক-মিটিক করার আড়ালে,যেমন কোনো সুন্দর ইশারা আঁকা হয়ে যায় অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির স্পন্দনের ক্যানভাসে;সেরকমই মেঘের ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে,তার রুপালি আঁচলার বিন্যাসে মেলে ধরা স্রোতের ধারা দেখে,আমিও মুগ্ধ ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ|দূরের সীমানা ঘেঁষে সারি-সারি সবুজের পাঁচিলগুলো যেন আলোর চিরুনিতে,মাথার চুল মেলাচ্ছে,নামতে থাকা কালো রঙের ঘোমটা মাথায় দেওয়ার আগে|
 
   
অপূর্বযেন এক অজানা সময়ে পা রেখে,আমি ঘাসের মাথায় নিজের পায়ের ক্ষমতা মাপার মধ্যেই,শিশিরের পা ধুইয়ে দেওয়ার ভেজা ভেজা অনুভূতি নিজের স্নায়ুতে মেশানোর আনন্দে এগিয়ে চলেছিকিছু কিছু মুহূর্ত ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করার মতো সময়ও নষ্ট করার মত ইচ্ছেও ছিল না বিশেষ;চোখের আরাম উপভোগ করার আনন্দেই শুধু পথ চলা ছিল রাতের কোনো নিশাচরের মতো| একলা হাঁটার মধ্যে কোথাও যেন চিন্তা মুক্ত বাতাসের শ্বাস নেওয়ার একটা স্বাদ বার বার পাচ্ছিলাম আমার নাকের আগায়|আমি তখনও জানতাম না যে শহরের বাতাসের-পরের বাতাসে এতকিছু লুকিয়ে থাকে;সেখানে যেমন নিজেকে নতুন করে অনুভব করার আনন্দ লুকিয়ে থাকে তেমনি পাওয়া যায় প্রকৃতির হাতের সৃষ্টি করা চারপায়া,শুধু নিজেকে শায়িত করে দিতে হয় ওই চারপায়াতে|

   
আমি এরকমই চেয়েছিলাম কোনো একটা দিনের শেষে রাতের আগমন,যেখানে শুধু থাকবো আমি,আমার ব্যাগ,পায়ের নিচের জুতো তার সাথে একটা ছোট ডায়েরি যেটাতে আমি লিপিবদ্ধ করবো আমার স্বাধীনতাকে|

  
কিছু কিছু জিনিস যেমন লেখকের লেখনীতেও কম থেকে যায়,সেরকমই হয়তো আমার একটা রাতের প্রকৃতিকে দেখার আনন্দটাও কোনো অক্ষরের পাঁচিলে সাজিয়ে তুলে ধরলেও, হয়তো অনেকের কাছেই, আমার একটা রাতের প্রকৃতির কোলে তারাগোনার সাথে সাথে , কালো সাদা মেঘের হাত ধরার চেষ্টার এই এক্সপেরিয়েন্স মনে হবে ঝিনুকের মধ্যে মুক্ত খুঁজে পাওয়ার মতোই কঠিন|

  
প্রতিটা মুহূর্তকে যেন মনে হচ্ছে আমার পিঠের ব্যাগের সাথে বেঁধে নিয়ে পাড়ি দিই  পরের দিনের সৈকতে|জানি সম্ভব নয় সেটা,তাই ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে আমি আরও একবার পেছনে ফিরে তাকালাম অতিক্রান্ত পথের ধুলোতে আমার মিশে যাওয়া পায়ের ছাপগুলোকে খুঁজে পাবার আশায়|সময় পার হয়ে যাওয়ার মতোই সেগুলো মিশে গেছে হয়তো শিশিরের চাদরে|

 
কোনো কিছু ব্যক্ত করার আগেই শেষ বারের মতো রাতকে নিজের মতো করে দেখে লেখার ব্যস্ততার ফাঁকেই দেখি দূরের দিগন্তে সূর্য হাজির একটা গোল থালাতে প্রদীপের শিখার ন্যায় ঊষার কিরণ নিয়ে|স্বাগত জানাচ্ছে আমাকে গাছের পাতাদের হাতের আঙুলের মাঝে মাঝে আলো পাঠিয়ে|আহ্বান জানাচ্ছে কোনো নতুন দিনের শুরু করার জন্য |

   
      আমিও সেই দিশাই পা-বাড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম আরেকটা দিনের সাথে |

Sunday, May 12, 2019

শেকড়


তিন কুঠরি ঘরটার ঠিক পূর্ব দিকে এক পাল্লার একটা জানালা রোজ খোলা থাকে, ওটার দর্শক বলতে বছর পঁয়ষট্টির একজন সাদা মাথার, লম্বা চুলের, রঙিন কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলা| দুপুর পোহালেই তিনি জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো বট গাছটার দিকে কিছু আশা  নিয়ে দেখতে থাকেন। দেখতে দেখতে হয়তো কিছু ভাবেন, কে জানে কী ভাবতেন তিনি! একদিন আমার NGO থেকে অনুমতি নিয়ে আমি তাঁর ঘরে ঢুকলাম, অবশ্যই কিছু জানার জন্য। সুন্দর একটা চেয়ারে বসতে দিলেন তিনি, বসেই এক গ্লাস জলও দিলেন|আমি শুরু করলাম আমার জিজ্ঞাসার কথাগুলো| জানতে চাইলাম তাঁর পরিচয়, উত্তরে বললেন, " আমি কৃষ্ণেন্দুর মা, আমার ছেলে এখন জর্জিয়াতে এক বিশাল  কোম্পানিতে চাকরি করে, হয়ে গেলো প্রায় এগারো বছর"। বলেই তিনি চুপ,আবার আশাতীত চোখে দেখতে থাকলেন ওই বট গাছটাকে|
        
                  এবার বেশ স্বাভাবিকভাবেই শুরু হলো আমাদের কথোপকথন---

আমি:: আচ্ছা, আমি তাহলে আপনাকে মাসিমা বলেই ডাকি ?

মাসিমা:: হ্যাঁ| এতে আবার জিজ্ঞস করার কি আছে !

আমি:: আচ্ছা মাসিমা আপনি রোজ ওই বট গাছটার দিকে তাকিয়ে কি ভাবেন ?
মাসিমা:: আমি শুধু দেখি, দেখে কিছু শিক্ষা নিই, তুমিও যদি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য কারো তুমিও ঠিক বুঝতে পারবে| যৌবনে আছো তো তাই এসবে তোমার চক্ষুপাত বা জিজ্ঞাসার কোনো আখাঙ্কা নেই, একটু বসয়সে চুলগুলো কপাল থেকে মাঝ মাথায় গেলেই তুমিও হয়তো ভাবে এরকমই কোনো কিছু স্থির জিনিসের দিকে তাকিয়েই| মিল খোঁজার  চেষ্টা করবে তোমার জীবনের সমান্তরালে  চলতে  থাকা  অন্য আরেকটা জীবনের গতিপথের মোড়গুলো  কোথায় গিয়ে ঠোক্কর খায় |

আমি:: কিরকম ?
মাসিমা:: দেখো এই গাছটার দিকে চেয়ে, হয়তো ওটার পৃথিবীতে আগমন আমার আসার আগেই হয়েছে, ওটার প্রাণের দামও  কিন্তু  আমার মতোই খুব দামি, ওটাও ভাবে তার থেকে জন্ম নেওয়া প্রতিটা ঝুরির জন্য, প্রতিটা পাতার জন্য, সে সবুজ পাতায় হোক বা পড়ে যাওয়া ওই হলদে মাটির বর্ণের পাতায় হোক, ওটা কিন্তু ওদের কে আগলে রাখার জন্যই নিজের শেকড় ধরে, মাটি কামড়ে ধুয়ে যাওয়া ভূমিক্ষয়ের ওপরেও দাঁড়িয়ে থাকে |

আমি:: কিছুই বুঝলাম না ক্ষণ আপনার কথা, একটু খুলে বলুন না| ছোট মাথা, ছোট বয়স, চিন্তার আকাশে শুধু গোলাপের তারারায় জ্বল-জ্বল করে |
মাসিমা:: ঈষৎ হেসে, মাসিমা আবার বলতে শুরু করলেন | আমার মতোই ওটাও ওই ঝুরি, পাতাগুলোর মা, ওটার থেকেই ওদের জন্ম| ওদের জন্য একটা শেকড় আঁকড়েই ওটা হয়তো এখনও ক্লোরোফিলে নিজেকে রোজ রাঙানোর চেষ্টা করে|আমার ক্ষেত্রেও, আমিও রোজ কৃষ্ণেন্দুর জন্য নিজেকে এখনো সেই বত্রিশ বছরে ফিরিয়ে নিয়ে যায় | রোজ রোজ যেন মনে পড়ে এই তো সেদিনই আমার সামনে থেকে গেলো সে পড়তে বাইরের রাজ্যে, আমাকে একটা নতুন ঘরে সাজাবে বলে, আমার কিন্তু কোনো উচ্ছাস বা উচ্চাশা ছিল না, কারণ আমি তো মা, আমি শুধু চাইতাম যেন শুধু নিজের পায়ের মাটিটুকু আমার মতোই কোনো শক্ত শেকড়ে বাঁধতে পারে| যখন আমার থেকে দূরে গেলো, আমাকে বলে গেছিলো, ফিরে এসে দেব তোমার অট্টালিকার ছাদ | আজ এগারো বছরে  আমার সম্বল শুধু এই তিনকুঠরী ঘরের সাথে কিছু আমার মতোই আরও অনেক কৃষ্ণেনেদুর মা-এর দল |


আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে, নিজের মোবাইল থেকে একটা কোনো কিছু তাড়ার খোঁজ করতে লাগলাম, আমি কোনো প্রশ্ন খুঁজে পেলাম না, কোনো কিছু বলার আগেই, মাসিমা নিজের থেকেই শুরু করলেন তার পরের কথা গুলো

এবার একটু নরম সুরে---

মাসিমা:: আমি নিজেও স্কুল টিচার ছিলাম, কৃশকে তার ছোট থেকেই কোনো রকম আঁচড় না লাগতে দিয়েই হিক ওই বট গাছটার মতোই আগলে রাখতাম | প্রতিদিনের পড়া থেকে শুরু করে, স্কুল ফাইনালের পরীক্ষা পর্যন্ত রাত জেগে তৈরী করে দিতাম ওকে, কিন্তু আজ দেখো চাকরির কাজে বাইরে গেলো আমাকে ছেড়ে, এগারো বছরে মনে রেখে সতেরো বার ফোন করেছে বটে,কিন্তু আজকে তুমি  যে চেয়ারটায়  বসে আছো ওটা কিন্তু কোনো দিন কৃষ্ণেন্দুর গায়ের গন্ধে ভরেনি| সত্যি বলতে,আমি শুধু ওই গাছটার দিকে তাকিয়ে নিজের মধ্যে ওর মতোই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে আমার ছেলের জন্যই অপেক্ষায় কাটাই, আর ভাবি যেন ওর আগামী দিনের ঝুরি পাতা গুলো যেন ওকে ছেড়ে গেলেও নিজেদের কে মূল শেকড় থেকে না বিচ্ছিন্ন করে|

মাসিমার মুখে শেষ দুটো লাইন শোনার পরেই,আমার মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুত কান্নার স্রোতের ঢল বাইরে বয়তে চেয়েও পারছে না বয়তে| আমি খানিক ক্ষণ চুপ করে বসে থেকে দু- গ্লাস জল খেলাম,বিকেল তখন প্রায় হবে হবে, আমার NGO-এর নির্ধারিত সময়টাও প্রায় শেষের মুখে, এবার আমার ফিরে আসার পালা, আসার আগে শুধু দু-পা ছুঁয়ে প্রণাম করে, পরে কবে আসবো সেটা জেনেই বেরিয়ে এলাম|


এখনো যাওয়া আসা হয়, এখনো গল্প গুলো ঠিক মাসিমার কথা মতোই  হয়,কিন্তু প্রথম দিনের থেকে আজ-কালের কথোপকথনে একটাই ফারাক, প্রথম দিনটা ছিল আমার কর্তব্যের খাতিরে যাওয়া,আর এখন যাওয়া হয় কোনো কিছুর টানে,ঠিক যেন অন্য কোনো গাছের কোঠরে অন্য গাছের জন্ম নেওয়ার মতোই|